অবয়ববাদী মনোবিদগনের মতে চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করাই মনোযোগ। আধুনিক মনোবিদদের মতে, কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে মনকে নিবিষ্ট করার দৈহিক মানসিক প্রক্রিয়াকে মনোযোগ বলে।
শিক্ষায় মনোযোগের ভূমিকা : শিক্ষার সঙ্গে মনোযোগের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শিখনের প্রথম শর্ত হল মনোযোগ। শিখনের আচরণমূলক তত্ত¡ ও জ্ঞানমূলক তত্ত¡ উভয়েই মনোযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিখনের একটি বড়ো সমস্যা হল শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করা। এব্যাপারে মনোবিদরা কয়েকটি কৌশলের কথা উলেখ করেছেন।
ক) মনোযোগ আকর্ষী কৌশল : ব্যক্তি জীবনে মনোযোগের রূপ এক থাকে না। শৈশবকালে ব্যক্তি নিরপেক্ষ মনোযোগের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্তরে বস্তুর বৈশিষ্ট্যই মনোযোগের নির্ধারক। শিক্ষণীয় বিষয়গুলির মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। শিশুর চাহিদা সম্পর্কে শিক্ষক অবগত থাকবেন। শিশুর চাহিদা হল খেলা। তাই শিশুর পাঠ্যক্রম হবে ক্রীড়াভিত্তিক এবং শিখন পদ্ধতি হবে ক্রীড়াকেন্দ্রিক।
খ) ইচ্ছাসাপেক্ষ কৌশল : পরবর্তী স্তরে ইচ্ছাসাপেক্ষ মনোযোগ দেখা যায়। এই সময় শিখনের উদ্দেশ্য ও ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করে, উপদেশ দিয়ে, সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে, প্রয়োজন হলে লঘু শাসন করা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে।
গ) নির্ধারক প্রয়োগ কৌশল : তীব্রতা স্পস্টতা পুনরাবৃত্তি, নতুনত্ব প্রভৃতি মনোযোগের বস্তুগত নির্ধরাকগুলিকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের অক্ষরগুলি যাতে বড়ো হয় সেদিকে লক্ষ করতে হবে।
ঘ) পরিসর অনতিক্রম্য কৌশল : শিক্ষককে বিষয়বস্তু নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তা যেন শিক্ষার্থীর মনোযোগের পরিসর অতিক্রম না করে। শব্দ বা বাক্য যাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের গড় পরিসরের মধ্যে থাকে, সেদিকে পুস্তক রচয়িতারা নজর রাখবেন। প্রয়োজনে বড়ো ও জটিল বাক্যকে ছেটো ছোটো সরল বাক্যে পরিণত করতে হবে।
ঙ) বিষয় বৈচিত্র্য প্রয়োগ কৌশল : মনোযোগের চঞ্চলতা ও পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে শিক্ষক সচেতন হবেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা না করে মাঝে মাঝে তিনি তথ্য বিষয়ে চলে যাবেন। মনোযোগ যেহেতু শিখনের ক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধানশর্ত, তাই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে লিখিত ও অলিখিত সব ধরনের চেষ্টা করে যেতে হবে, যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মনোযোগ সৃষ্টি হয়।