১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট , শর্তাবলি ও গুরুত্ব আলোচনা করো ?

Table of Contents

ভারত শাসন আইন: সাইমন কমিশনের সুপারিশ এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাশ করে। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা।

ভারত শাসন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট :

  • গন আন্দোলন : ১৯১৯ খিস্টাব্দের মন্টফোর্ড আইন ভারতীয়দের আশা আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা ভারতে প্রবল গণআন্দোলন শুরু হয়।
  • `জাতীয়তাবাদের আতঙ্ক : ভারতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধি ব্রিটিশ সরকারকে খুবই ভাবিয়ে তুলেছিল। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার প্রয়াস চালায়।
  • সাইমন কমিশনের রিপোর্ট : ভারতীয় স্বায়ত্বশাসন লাভের উপয্ক্তু কিনা তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সাইমন কমিশন ভারতে আসে। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তা দূর করতে সরকার সচেষ্ট হয়।
  • গোলটেবিল বৈঠক : সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য পরপর তিনটি গোলটেবিল বৈঠক ডাকে। এর ভিত্তিতে সরকার নতুন সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
  • ভারত শাসন আইন পাস : সাইমন কমিশন ও গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার ভিত্তিতে সরকার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এরই ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাস হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে শর্তাবলী :- এই আইনের মাধ্যমে

  • ১) ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে দেশীয় রাজ্যগুলির পক্ষে এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান স¤পূর্ণ তাদের ইচ্ছাধীন ছিল।
  • ২) কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠনের ব্যবস্থা করা হয় এবং তাতে দেশীয় রাজ্যগুলির রাজন্যবর্গের মনোনীত প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
  • ৩) মুসলিমদের জন্য সা¤প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং তপশিলিদের জন্য ‘পুণা চুক্তি’ অণুসারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া শিখ, খ্রিস্টান, ইউরোপীয় প্রভৃতি স¤প্রদায়ের পৃথক প্রতিনিধি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।
  • ৪) কেন্দ্রীয় শাসনের বিষয়গুলিকে সংরক্ষিত এবং হস্তান্তরিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দেশ রক্ষা, শান্তিশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্র এবং ধর্মসংক্রান্ত বিষয় স¤পূর্ণভাবে গভর্নর জেনারেল ও তাঁর তিন উপদেষ্টার হাতে থাকবে। এব্যাপারে ভারতীয় আইনসভার কোনো অধিকার ছিল না।

প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে : অপরদিকে এই আইনের মাধ্যমে

১) প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়।

২) স্থির হয় যে, প্রাদেশিক গভর্নরের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীসভা গঠিত হবে এবং তার সদস্যরা প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের মধ্যে থেকে মনোনীত হবেন।

৩) কেন্দ্রের মতো প্রদেশগুলিতেও আইনশৃঙ্খলা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় গভর্নরের অধিকারভুক্ত হয়।

গুরুত্ব : বিভিন্ন সমালোচনা সত্তে¡ও ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের কিছু গুরুত্ব অবশ্যই ছিল। ক)ভারত শাসন আইন ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। খ)এই আইনের মাধ্যমে ভারতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। গ) স্বাধীন ভারতের সংবিধানের কাঠামোটি ১৯৩৫ খ্রিঃ ভারত শাসন আইনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। ঘ) এই আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলি যেটুকু স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার পেয়েছিল, জিন্না ও মুসলিম লিগ তার প্রশংসা করে।

===>>> হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা