সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।

Table of Contents

হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা : সাম্রাজ্যবাদ ও উনিবেশিকতাবাদের ব্যাখ্যাদাতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন জে.এ. হবসন এবং ভি.আই. লেলিন। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদ সম্পর্কে তাঁদের এই অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ‘হবসন-লেনিন থিসিস’ নামে পরিচিত।

হবসনের ব্যাখ্যা

হবসনের ব্যাখ্যা – ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ্ জে.এ. হবসন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর “ওসঢ়বৎরধষরংস : অ ঝঃঁফু” গ্রন্থে ‘সাম্রাজ্য ও উপনিবেশিকতাবাদ’ সম্পর্কে বিষদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

  • ১) উদ্বৃত্ত পুঁজির সৃষ্টি – হবসন দেখিয়েছেন যে, পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি মালিকদের হাতে বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর মূলধন জমা হয়। এই মূলধনের পাহাড় সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ ছিল সমাজে ধনসম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য। ইউরোপের পুঁজিপতিরা পিছিয়ে পড়া এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে শিল্পের প্রসার ঘটাত এবং উৎপাদিত শিল্প দ্রব্য অণুন্নত দেশগুলিতে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত।
  • ২) পুঁজিপতিদের চাপ – হবসন মনে করেন যে বাড়তি মূলধনের চাপই সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশ দখলের মূল কারণ। পুঁজিপতি শ্রেণি তাদের উদ্বৃত্ত মূলধন উনিবেশে বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা নিজ নিজ দেশের সরকারকে চাপ দিয়ে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে।
  • ৩) উপনিবেশিকতাবাদের অবসানের উপায় – হবসন মনে করেন যে, পুঁজিপতি শ্রেণির বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগের জন্য নতুন উপনিবেশ দখলের ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন যে, সম্পর্কের সুষমবণ্টন ও অভ্যন্তরীন সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে। তিনি পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিতরণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যে তা ব্যবহারের কথা বলেন।

লেনিনের ব্যাখ্যা

লেনিনের ব্যাখ্যা – বিখ্যাত রুশ কমিউনিস্ট নেতা ভি.আই. লেনিন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর “ওসঢ়বৎরধষরংস : ঃযব ঐরমযবংঃ ঝঃধমব ড়ভ ঈধঢ়রঃধষরংস” গ্রন্থে ‘সাম্রাজ্য ও উপনিবেশিকতাবাদ’ সম্পর্কে বিষদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

  • 1) পুঁজির উদ্ভব- লেনিন দেখিয়েছেন যে, শিল্পের অগ্রগতির ফলে ইউরোপের দেশগুলির মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে বিপুল পরিমাণ পুঁজি সঞ্চিত হয়। এই সঞ্চিত পুঁজি লাভজনকভাবে লগ্নি করা পুঁজিপতিদের কাছে একটি সমস্যা হয়ে ওঠে। এই পুঁজি ইউরোপের ভূখন্ডের গন্ডির মধ্যে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করার সম্ভাবনা কম ছিল। এই পরিস্থিতিেিত পুঁজিবাদী দেশগুলি ইউরোপের বাইরে নতুন উপনিবেশের প্রসার ঘটিয়ে সেখানে উদ্বৃত্ত পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
  • 2) পুঁজি বিনিয়োগ- লেনিনের মতে, শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলির পুঁজিপতি শ্রেণি নতুন উপনিবেশ দখল করে সেখানকার শিল্পপণ্য বিক্রির বাজার দখলের চেয়েও সেখানে পুঁজি বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী ছিল। তাই উপনিবেশ থেকে সংগ্রহ করা কাঁচামাল নিজ দেশে নিয়ে না গিয়ে উপনিবেশেই পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং সেখানেই পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করার জন্য চেষ্টা চালায়। লেনিনের মতে, “সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ স¤প্রসারিত রূপ”।
  • 3) প্রতিদ্ব›িদ্বতা – বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উপনিবেশ দখলের উদ্যোগ নিলেও উপনিবেশের সংখ্যা ছিল সীমিত। ফলে উপনিবেশ দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এই প্রতিযোগিতার অবশ্যসম্ভাবী পরিণতি হল যুদ্ধ।লেনিনের মতে, “পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা।”

===>>> ভারতে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা