মীরাট য়ড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো ও মামলাটির পরিণতি কী হয়েছিল ?

Table of Contents

ভূমিকা : উনবিংশ শতকের শেষার্ধে ভারতে শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে নানা দাবিকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রাতিষ্ঠিত হলে শ্রমিকদের উপর কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমিক আন্দোলন সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার ভারতের শ্রমিক শ্রেণির সঙ্ঘবদ্ধতা ও তাদের সঙ্গে কমিউনিস্টদের যোগাযোগ ছিন্ন করার জন্য এক অভিনব পন্থা গ্রহণ করে। এই পন্থা অণুসারে শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরকার তাদের কারারুদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাই মিথ্যা মামলা মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত

প্রেক্ষাপট : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট ছিল

১) শ্রমিক অসন্তোষ : ভারতের বিভিন্ন কলকারখানায় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি প্রদান, কাজের সময় হ্রাস, জমিদারি প্রথার বিলোপ, বাকস্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা প্রভৃতির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের প্রসার সরকারকে চিন্তায় ফেলে দেয়।

২) হুইটলি কমিশন নিয়োগ : শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রক্ষিপ্তে ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হুইটলি কমিশন নিয়োগ করেন। শ্রমিকদের এই কমিশন বর্জন করেন।

৩) আরউইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ন : বড়লাট আরউইন শিল্প বিরোধ বিল ও জন নিরাপত্তা বিল নামে দুটি আইন পাশ করেন। শিল্পবিরোধ বিলের দ্বারা শ্রমিকদের ধর্মঘট বেআইনি ঘোষিত হয়। জন নিরাপত্তা বিলের দ্বারা কমিউনিস্ট দমনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৪) ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার : কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলন স্তব্ধ করতে সরকার ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের আভিযোগ এনে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। গ্রেপ্তার ৩৩ জনের মধ্যে ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, পি.সি.যোশী, এস. এ. ডাঙ্গে, মীরাজ কর, গঙ্গাধর অধিকারী, শিবনাথ ব্যানার্জী, ধরণী গোস্বামী, এমন কী তিনজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা বেঞ্চজামিন ব্রডলি, ফিলিপ ¯প্রাট, লেস্টার হাচিনসন।

===>>> চিনের ওপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তিগুলির বিবরণ দাও

মীরাট য়ড়যন্ত্র মামলার পরিণতি :

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা চলে। জওহরলাল নেহরু, এম. সি. চাগলা, এম. এ. আনসারী গ্রেপ্তার হওয়া কমিউনিস্ট নেতাদের পক্ষে আইনি সওয়াল করেন। গান্ধিজি জেলে গিয়ে বন্দি নেতাদের শুভেচ্ছা জানান এই মামলার পরিণতি স্বরূপ

  • ১) মামলার রায় : প্রায় সকল নেতাকে দীর্ঘ মেয়াদি কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
  • ২) কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ করণ : মীরাট ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি চরম সংকটের মধ্যে পড়ে। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই কমিউনিস্ট পার্টি ও তারা শাখা সংগঠনগুলিকে বেআইনি ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়।
  • ৩) বামপন্থী আদর্শের প্রসার পরোক্ষে সহায়তা : ভারতের শ্রমিক আন্দোলন ও কমিউনিস্ট মতাদর্শ অঙ্কুরে বিনস্ট করতে ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্টদের গতি স্তব্ধ করতে পারেনি। বরং তা কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রসারে সহায়ক হয়েছিল।