ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা কীরূপ ছিল?

Table of Contents

ভারতে ভূমিরাজস্ব : ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তত্তবধানে গৃহীত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় ৪টি ভাগ ছিল – ক) বাংলায় প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা। খ) রায়তওয়ারি বন্দোবস্তো। গ)মহলওয়ারি বন্দোবস্তো। ঘ) ভাইয়াচারি বন্দোবস্তো।

ক) বাংলায় প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা :-

  • ১) পাঁচশালা বন্দোবস্তোঃ- ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে একটি ভ্রাম্যমান কমিটি গঠন করেন। যে ইজারাদার কোম্পানিকে সর্বোচ্চ পরিমান রাজস্ব দিতে রাজি হতো এই ভ্রাম্যমান কমিটি তাকে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্তো প্রদান করতেন এবং কোনো জমিদার সর্বোচ্চ পরিমান রাজস্ব দিতে অক্ষম হলে তিনি জমিদারি হারাতেন। এই ব্যবস্থা ইজারাদার ব্যাবস্থা বা পাঁচশালা বন্দোবস্তো নামে পরিচিত। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ভ্রাম্যমান কমিটি দুর্নিটি গ্রস্ত হয়ে পড়লে এই কমিটি বাতিল করে ওয়ারেন হেস্টিংস রাজস্ববোর্ড গঠন করেন।
  • ২। একশালা বন্দোবস্তঃ- ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় পাঁচশালা বন্দোবস্তের কিছু ত্র“টি বিচ্যুতি লক্ষ করা যায়, যার উদ্দেশ্যে ১৭৭৭ খ্রিঃ পাঁচশালা বন্দোবস্ত বাতিল করে নতুন ভ‚মি বন্দোবস্তের প্রচলন করেন। যা একশালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত এই ব্যবস্থা অণুসারে ১) প্রতিবছর পুরোনো জমিদারদের জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে। ২) বিগত তিন বছরে রাজস্বের গড় অনুসারে এই বন্দোবস্তে রাজস্বের পরিমান নির্ধারন করা হতো। ৩) জমিদার রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হলে জমিদারের এক অংশ বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব পরিষদের নিয়ম চালু হয়। ৪) এই ব্যবস্থাতেও কিছু ত্র“টিবিচ্যুতি দূর করার জন্য ১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারত শাসন আইন পাশ হয়। এই আইন অনুসারে জমিদারকে স্থায়ীভাবে জমি প্রদান করার কথা বলা হয়।
  • ৩) দশশালা বন্দোবস্তো ( ১৭৮৯-৯৩ ) :- ১৭৮৪তে পিটের ভারত শাসন আইনে ভূমিরাজস্ব সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা দূর হয়। ১৭৮৬ তে গভর্নর জেনারেল কর্ণওয়ালিশ এদেশে আসেন ও ১৭৮৯ তে তিনি জমিদারদের সাথে অস্থায়ী দশশালা বন্দোবস্তে করেন।
  • ৪) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তো :- ১৭৯৩ সালে কর্ণওয়ালিশ দশশালা বন্দোবস্তোকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করেন। এতে স্থির হয়Ñ ১) নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের মধ্যে ধার্য খাজনা জমা দিলে জমিদারেরা বংশানুক্রমিকভাবে জমি ভোগ করবে। ২) খাজনা চিরস্থায়ীভাবে নির্দিস্ট করা হয়। ৩) অতিরিক্ত অর্থ সরকার জমিদারের কাছে দাবি করবে না। ৪) জমিতে রায়তের অধিকার লিপিবদ্ধ করা হয়। ৫) জমিদাররা বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

খ) রায়তওয়ারি বন্দোবস্তো :-

ভারতের দক্ষিণে ও দক্ষিণ পশ্চিমে আলেকজান্ডার রীড ও টমাস মনরোর উদ্যোগে রায়তওয়ারি বন্দোবস্তো চালু কর হয় (১৮২০)। এই ব্যবস্থায় সরকারের সাথে কৃষকদের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়। এতে বলা হয় ২০ বা ৩০ বছর অন্তর সরকার ইচ্ছে করলে রাজস্বের হার বাড়াতে পারে।

গ) মহলওয়ারি বন্দোবস্তো :-

গাঙ্গেয় উপত্যাকা, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও মধ্য ভারতের কিছু অংশে ১৮২২ সালে মহলওয়ারি বন্দোবস্তো চালু করা হয়। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গড়ে তোলা হত মহল। ৩০ বছর মেয়াদে রাজস্ব নির্ধারিত হত। এতে জমিদার পেত ২০% ও সরকার পেত ৮০%।

ঘ) ভাইয়াচারী বন্দোবস্তো :-

১৮৪৬ সাল থেকে ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাবে প্রতিটি কৃষকের সাথে সরকারের ভাইয়াচার বন্দোবস্তো প্রচলিত হয়। রাজস্ব আদায় করতেন বড়ো চাষি।

====>>> মীরাট য়ড়যন্ত্র মামলা