আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

ভূমিকা : ইতিহাস হল গতিশীল সমাজ বিজ্ঞানের একটি শাখা। নতুন ভাবধারার আলোকে অতীত ঘটনাবলীর পুনরায় মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। একটি প্রজন্ম বা যুগ ইতিহাসের একই ঘটনাকে নতুন আঙ্গিকে সে যুগের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশ করে। আধুনিককালে ইতিহাস রচনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত কার্যাপ্রণালী লক্ষ করা যায়

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে নিম্নলিখিতো আলোচনা করা হলো :

  • মানবসমাজের সমস্ত দিকের আলোচনা : পূর্বে ইতিহাস বলতে বোঝানো রাজা মহারাজাদের পরিধির বিস্তার। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আধুনিক ইতিহাস রচনার উপর আলোকপাত প্রধান কর্তব্য হল ওই সমস্ত বিষয়ের উপর আলোকপাত করা।
  • তথ্যের উপর গুরুত্ব প্রদান : ইতিহাস রচনার প্রধান মাধ্যম তথ্য। তথ্য সংগৃহীত হয় নানা উপাদান থেকে। পৃথিবী জুড়ে আধুনিককালের ইতিহাস লেখার উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। ভারত ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। কাগজপত্র, জমি বিক্রির দলিল, বাজারের ফর্দ, আত্মজীবনী সবই ইতিহাসের কথা। আত্মজীবনী ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হলেও সোজাসুজি আত্মজীবনীকে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করলে হবে না। কারণ আত্মজীবনীকার তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা থেকে সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সাথে সেই সব ব্যাখ্যার বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে, নচেৎ তাঁর বক্তব্য ও রচিত ইতিহাস একপেশে হয়ে যাবে। কখনোও বা পুরো ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন ঐতিহাসিক। যেমন- উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন ছিলেন হিউমের জীবনীকার। তিনি তাঁর “অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম, ফাদার অফ দি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস” নামক গ্রন্থে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব হিউমকেই দিয়েছেন। পরে দেখা যায় ওয়েডারবার্নের তত্ত¡ নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার যে কৃতিত্ব হিউমকে ঐতিহাসিক যদি শুধু ওয়েডারবার্নের কথা মেনে নিতেন, তাহলে এই নতুন বিশ্লেষণ পাওয়া যেত না। অর্থাৎ সমস্ত উপাদানকে প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে ভেঙেচুরে দেখতে হবে ঐতিহাসিককে। ঐতিহাসিককে হতে হবে নির্মোহ, পক্ষপাত শূন্য ও আবেগবর্জিত।
  • ঐতিহাসিক ঘটনা নির্বাচন : ঐতিহাসিক অতীত বিষয় থেকে তাঁর ইতিহাসের ঘটনা বাছাই করবেন। ঐতিহাসিক ঘটনা নির্বাচন করা ঐতিহাসিকের প্রধান দায়িত্ব। অতীতের সব ঘটনাই ইতিহাসের সর্বার্গে মনে রাখতে হবে।
  • কার্যকারণ পদ্ধতি : প্রতিটি কার্য সংঘটিত হওয়ার পিছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। ঐতিহাসিককে সেই কার্যকারণ সম্পর্কটি খুঁজে বের করতে হবে। উদাহরণ ১৯১৭ খ্রিঃ রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পশ্চাতে বিভিন্ন কারণের অস্তিত্ব দেখা যায়। যেমন- রুশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়, রাশিয়ার উপর্যপরি সামরিক পরাজয়, বলশেভিকদের সফল প্রচার, লেলিনের যোগ্য নেতৃত্ব, কৃষি, সমস্যা, শ্রমিক শ্রেণির দুরাবস্থা প্রভৃতি। ঐতিহাসিকদের প্রধান কাজ হল এই সব কারণ অণুসন্ধান করা।
  • ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম : ঐতিহাসিকরা ইতিহাসের ঘটনাবলী কালানুক্রমে আলোচনা করবেন। ঐতিহাসিকগণ ঘটনার ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার পর্বটি কখন ঘটেছিল তা উলে­খ করবেন। সময়ের উলে­খ করলে রচিত ইতিহাসটি মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
  • ভৌগোলিক অবস্থানের উলে­খ : ভৌগোলিক স্থানের উলে­খ করার বিষয়টিও একজন ঐতিহাসিকের পক্ষে ভীষণ জরুরি। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় নবাব সিরাজ উদ-দৌলা ও লর্ড ক্লাইভের মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল বললে তা কখনো সঠিক ঐতিহাসিক বর্ণনা হতে পারে না। যুদ্ধের স্থানটি যে পলাশীর মাঠ তা উলে­খ করা অত্যন্ত জরুরি।

মূল্যায়ন : ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্নতা থাকলেও কতকগুলি মূল ধারণা যা অপরিবর্তিত সেগুলি ঐতিহাসিকেরা ব্যবহার করে থাকেন। এর মাধ্যমে একজন ঐতিহাসিক যথার্থ ইতিহাস রচনা করতে পারেন। শুধু তাই নয় ইতিহাস পাঠকে সকল স্তরের মানুষের কাছে মনোগ্রাহী করে তুলতে হবে এই বিষয়ে ঐতিহাসিকের নজর থাকা অপরিহার্য।
দুটি শিল্প যাদুঘরের নাম হল ক) অক্সফোর্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ের অ্যাসমোলিয়ান যাদুঘর। খ) দিলি­র জাতীয় মিউজিয়াম।

====>>> শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিকার